
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল – বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন-ভাতা প্রদান এবং ব্লকপদ বিলুপ্ত করে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন। এ দুই দফা দাবি না মানলে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সারাদেশের বিচার বিভাগের কর্মচারীরা।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মো. রেজোয়ান খন্দকার তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বিচার বিভাগের বিভিন্ন বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেন। রেজোয়ান খন্দকার বলেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর শুধুমাত্র বিচারকদের জন্য ৬টি গ্রেড রেখে পৃথক পে-স্কেলসহ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। তবে সহায়ক কর্মচারীদের ওই পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বিচারকদের সঙ্গে আদালতের সহায়ক কর্মচারীরা একই দপ্তরে কাজ করেন। তবে জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-স্কেলের আলোকে বিচারকদের বেতন-ভাতাদি হলেও সহায়ক কর্মচারীরা জনপ্রশাসনের আলোকে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন। এছাড়া অনেক কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়াই আক্ষেপ ও হতাশা নিয়ে একই পদে ৩৮ থেকে ৪০ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি বঞ্চিত থেকে অবসরে যাচ্ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, সচিবালয়ে একজন অফিস সহায়ক চাকরিতে যোগদান করে উপসচিব পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে অফিস সহকারী পদোন্নতি পেয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পর্যন্ত হতে পারেন। পুলিশের কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। অথচ শতভাগ বৈষম্যের শিকার অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীরা।
রেজোয়ান খন্দকার বলেন, দুই দফা ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এরই মধ্যে স্মারকলিপি প্রদানসহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনায় দাবি বাস্তবায়নে আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করে দাবি উপস্থাপন করে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন দাবি যৌক্তিক হিসেবে সহমত পোষণ করলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রদানকৃত কমিশন কর্তৃক প্রতিবেদনের সুপারিশে অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীদের বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন-ভাতাদি প্রদানের বিষয়ে কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি। এছাড়া চাকরি ও নিয়োগ বিধিমালার যুগোপযোগী সংস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি তার অভিভাষণে অ্যাসোসিয়েশনের দাবি উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন। এরই মধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় সৃষ্টির কার্যক্রম চলমান। সেখানেও সহায়ক কর্মচারীদের বৈষম্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ না থাকায় অধস্তন আদালতের প্রায় ২০ হাজার সহায়ক কর্মচারীকে আশাহত করেছে। যা বৈষম্যহীন ও স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চরম অন্তরায়।
দুই দফা দাবি স্পষ্ট করে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, সব ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজন, যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।
এসময় হুঁশিয়ারি দিয়ে রেজোয়ান খন্দকার বলেন, আমাদের দুই দফা ন্যায্য দাবির বিষয়ে আগামী ৫ মে’র মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে সারা দেশের অধস্তন বিচার বিভাগের কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে কর্মবিরতি পালন করবেন। আগামী ৫ মে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা করছি। এরপরও দাবি না মানলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. ছালাউদ্দিন, সহ-সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিক আহাম্মেদ রিংকু,সৈয়দ গুলাম হাদী প্রমুখ।