ঢাকা ১১:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

“শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব দেশ নতুন করে” – মৌলভীবাজারে ঐক্য ও সংকল্পের মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালিত

মহান মে দিবসের ঐতিহাসিক আহ্বানে আজও ধ্বনিত হয় শ্রমিকের অধিকার, মর্যাদা আর সমতার বার্তা। আর এই বার্তাকে সঙ্গীত করে মৌলভীবাজারের শ্রমজীবী মানুষ, মালিকপক্ষ ও সুধীসমাজ এক কাতারে মিলিত হয়েছেন। “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে গড়ব দেশ নতুন করে” – এই প্রতিপাদ্যকে হৃদয়ে ধারণ করে জেলায় অনাড়ম্বর কিন্তু গভীর তাৎপর্যপূর্ণভাবে পালিত হলো আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।

সকাল সাড়ে ১০টায় মৌলভীবাজার শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর নেতৃত্বে র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয় র‍্যালিতে অংশ নেন স্থানীয় শিল্প মালিক সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, জেলা প্রশাসকসহ সরকারি কর্মকর্তা এবং কয়েক শতাধিক শ্রমিক। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় শ্লোগান ওঠে,”মালিক-শ্রমিক হাত এক, দেশের উন্নয়ন অটুট রেখ”।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন , “শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং মালিকদের সঙ্গে সুসম্পর্কই পারে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে। সরকার শ্রমিক-মালিক সমন্বয়ে সকল নীতি প্রণয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

এবারের মে দিবসে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল স্থানীয় চা-বাগান ও হস্তশিল্প শিল্পের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন। দোকান কর্মচারী ইউনিয়ন মৌলভীবাজার সদর -৬৩
সভাপতি : আলাউদ্দিন শাহ বলেন ,”চা শ্রমিক এবং বিভিন্ন স্তরের শ্রমিকদের আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মালিকদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। আমরা একসাথে কাজ করলে অসম্ভব কিছু নেই।”

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী মৌলভীবাজারে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন এর ব্যানারে কয়েক শত নেতাকর্মী এবং শ্রমিক নিয়ে র‍্যালি এবং পরে সমাবেশ করেন র‍্যালি টি কুসুমবাগ পয়েন্ট থেকে আরম্ভ করে প্রেসক্লাব মোড় এসে শেষ হয় এবং পরে সমাবেশ করেন সমাবেশে বক্তারা বর্তমান সরকারের কাছে ১২ টি দাবি উত্থাপন করেন দাবিগুলো নিম্নরূপ।

• ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে দেশের শ্রমনীতি ঢেলে সাজাতে হবে।

• বন্ধকৃত পাটকলসহ সকল বন্ধ কল-কারখানা অবিলম্বে চালু করতে হবে।

• নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম শ্রমজীবী মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

• জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

• গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করতে হবে।

• পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধসহ শ্রমিকদের উপরে প্রশাসনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

• রেল ও বন্দর রক্ষায় এই সেক্টরের শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি অবিলম্বে মেনে নিতে হবে।

• শ্রমজীবী মানুষের জন্য বাসস্থান, রেশনিং, চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের বিনামূল্যে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

• বেতন ভাতাসহ নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করতে হবে।

• সার, বীজ ও কীটনাশকের মূল্য কমাতে হবে এবং কৃষকের উৎপন্ন ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।

• অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

• সকল ধরণের শিল্প কল-কারখানায় শ্রমিক ছাটাই বন্ধ করতে হবে।

মে দিবসের এই আয়োজন শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, ছিল মৌলভীবাজারের শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার নতুন অঙ্গীকার। সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে যেন সমৃদ্ধির পথে একসাথে এগিয়ে যায় মৌলভীবাজার – এই হোক দিবসটির প্রকৃত আহ্বান।

 

ট্যাগস :

“শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব দেশ নতুন করে” – মৌলভীবাজারে ঐক্য ও সংকল্পের মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালিত

আপডেট সময় : ১০:১২:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

মহান মে দিবসের ঐতিহাসিক আহ্বানে আজও ধ্বনিত হয় শ্রমিকের অধিকার, মর্যাদা আর সমতার বার্তা। আর এই বার্তাকে সঙ্গীত করে মৌলভীবাজারের শ্রমজীবী মানুষ, মালিকপক্ষ ও সুধীসমাজ এক কাতারে মিলিত হয়েছেন। “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে গড়ব দেশ নতুন করে” – এই প্রতিপাদ্যকে হৃদয়ে ধারণ করে জেলায় অনাড়ম্বর কিন্তু গভীর তাৎপর্যপূর্ণভাবে পালিত হলো আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।

সকাল সাড়ে ১০টায় মৌলভীবাজার শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর নেতৃত্বে র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয় র‍্যালিতে অংশ নেন স্থানীয় শিল্প মালিক সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, জেলা প্রশাসকসহ সরকারি কর্মকর্তা এবং কয়েক শতাধিক শ্রমিক। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় শ্লোগান ওঠে,”মালিক-শ্রমিক হাত এক, দেশের উন্নয়ন অটুট রেখ”।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন , “শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং মালিকদের সঙ্গে সুসম্পর্কই পারে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে। সরকার শ্রমিক-মালিক সমন্বয়ে সকল নীতি প্রণয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

এবারের মে দিবসে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল স্থানীয় চা-বাগান ও হস্তশিল্প শিল্পের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন। দোকান কর্মচারী ইউনিয়ন মৌলভীবাজার সদর -৬৩
সভাপতি : আলাউদ্দিন শাহ বলেন ,”চা শ্রমিক এবং বিভিন্ন স্তরের শ্রমিকদের আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মালিকদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। আমরা একসাথে কাজ করলে অসম্ভব কিছু নেই।”

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী মৌলভীবাজারে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন এর ব্যানারে কয়েক শত নেতাকর্মী এবং শ্রমিক নিয়ে র‍্যালি এবং পরে সমাবেশ করেন র‍্যালি টি কুসুমবাগ পয়েন্ট থেকে আরম্ভ করে প্রেসক্লাব মোড় এসে শেষ হয় এবং পরে সমাবেশ করেন সমাবেশে বক্তারা বর্তমান সরকারের কাছে ১২ টি দাবি উত্থাপন করেন দাবিগুলো নিম্নরূপ।

• ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে দেশের শ্রমনীতি ঢেলে সাজাতে হবে।

• বন্ধকৃত পাটকলসহ সকল বন্ধ কল-কারখানা অবিলম্বে চালু করতে হবে।

• নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম শ্রমজীবী মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

• জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

• গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করতে হবে।

• পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধসহ শ্রমিকদের উপরে প্রশাসনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

• রেল ও বন্দর রক্ষায় এই সেক্টরের শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি অবিলম্বে মেনে নিতে হবে।

• শ্রমজীবী মানুষের জন্য বাসস্থান, রেশনিং, চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের বিনামূল্যে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

• বেতন ভাতাসহ নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করতে হবে।

• সার, বীজ ও কীটনাশকের মূল্য কমাতে হবে এবং কৃষকের উৎপন্ন ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।

• অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

• সকল ধরণের শিল্প কল-কারখানায় শ্রমিক ছাটাই বন্ধ করতে হবে।

মে দিবসের এই আয়োজন শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, ছিল মৌলভীবাজারের শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার নতুন অঙ্গীকার। সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে যেন সমৃদ্ধির পথে একসাথে এগিয়ে যায় মৌলভীবাজার – এই হোক দিবসটির প্রকৃত আহ্বান।