ঢাকা ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
শিরোনাম ::
Logo মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা, মরদেহ নিয়ে মানববন্ধন Logo সাংবাদিক কন্যা জামিমা আলীর বিবাহ সম্পন্ন,শুভেচ্ছায় ভাসছেন নব দম্পতি। Logo দেশের রাজনৈতিক আকাশে নতুন করে মেঘের আবির্ভাব হয়েছে: মান্না Logo জনগণই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে: যুক্তরাষ্ট্র Logo ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে বিএনপি: আসিফ নজরুল Logo বরিশালে ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ Logo ছয় দাবিতে সিলেট পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ Logo বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা Logo ট্রাম্পের চাপ উপেক্ষা করলো হার্ভার্ড, টিকতে পারবে কতদিন? Logo মৌলভীবাজারে জেল সুপার হিসেবে যোগদানের পর অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যায়-(দুদক) অনুসন্ধানে

কথিত বাফার জোনকে ‘কিল জোন’-এ পরিণত করছে ইসরায়েলি সেনারা

গাজার অর্ধেক দখল নিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি

গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার পর ইসরায়েলি বাহিনী অঞ্চলটির প্রায় অর্ধেকেরও বেশি অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ক্রমেই সংকুচিত ভূ-খণ্ডের দিকে। গাজা সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও অবকাঠামো ধ্বংস করে এমন অবস্থায় ফেলেছে, যেখানে বসবাস অসম্ভব। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সামরিক বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ হয়েছে। তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড এ খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েল বলছে, হামাসকে চাপে রাখতে এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় জিম্মি করা বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে এই ব্যবস্থা অস্থায়ীভাবে নেওয়া হয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠন ও গাজা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের দখলকৃত এলাকা—যার মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে বিভক্তকারী একটি করিডরও রয়েছে—দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস পরাজিত হলেও গাজায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে এবং ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

ইসরায়েলি সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ ও বাফার জোনের পরিকল্পিত সম্প্রসারণ গত ১৮ মাস ধরে চলছে বলে পাঁচ ইসরায়েলি সেনা মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন। এক ট্যাংক স্কোয়াডের সদস্য বলেন, তারা যা কিছু ধ্বংস করা সম্ভব, সব ধ্বংস করেছে। ফিলিস্তিনিদের ফিরে আসার মতো কিছুই থাকবে না। তারা কখনোই ফিরে আসবে না।

ইসরায়েলি বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের সংগঠন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স সোমবার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে সেনারা বাফার জোনকে একটি বিরান ভূমিতে পরিণত করার কথা স্বীকার করেছেন। সংগঠনটির দাবি, ব্যাপক ও ইচ্ছাকৃত ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ভবিষ্যতে এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার পথ তৈরি করছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা শুধু দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ৭ অক্টোবরের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণাঞ্চলের সম্প্রদায়গুলোর সুরক্ষা বাড়াতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের দাবি, গাজায় বেসামরিক লোকজনকে ক্ষতি করার কোনও ইচ্ছা নেই এবং তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলছে।

যুদ্ধ শুরুর দিনগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজাকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে ফেলে। সীমান্তসংলগ্ন এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের বের করে দিয়ে এক কিলোমিটারেরও বেশি গভীরে একটি বাফার জোন তৈরি করা হয়। এ ছাড়া নেতজারিম করিডর নামে একটি ভূখণ্ড দখল করে উত্তরের গাজা সিটি ও দক্ষিণের বাকি অংশকে বিচ্ছিন্ন করা হয়, যা গাজার ৫০ শতাংশেরও বেশি এলাকা দখল করে আছে বলে জানিয়েছেন বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াকভ গার্ব।

গত সপ্তাহে নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, দক্ষিণ গাজায় আরেকটি করিডর তৈরি করা হবে, যা রাফাহ শহরকে বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ আরও বিস্তৃত হচ্ছে, যেসব এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

‘কিল জোন’-এ পরিণত হওয়া বাফার জোন

ইসরায়েলি সেনারা বলছেন, বাফার জোনের কোনও স্পষ্ট সীমানা নেই। তবে যে কোনও ফিলিস্তিনিকে সেখানে প্রবেশ করলেই গুলি করা হচ্ছে। এক ট্যাংক স্কোয়াডের সদস্য বলেন, আর্মার্ড বুলডোজার দিয়ে জমি সমতল করে একটি ‘কিল জোন’ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ট্যাংক থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে প্রবেশকারী যে কাউকেই গুলি করা হবে—নারী ও শিশুরাও এর বাইরে নয়।

তিনি আরও বলেন, অনেক সেনা ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন কাজ করছে। আমি সেখানে গিয়েছিলাম তাদের হত্যা করার জন্য কারণ তারা আমাদের হত্যা করেছে। কিন্তু দেখলাম আমরা শুধু তাদেরই হত্যা করছি না, তাদের স্ত্রী, শিশু, এমনকি তাদের বিড়াল-কুকুরও মেরে ফেলছি। তাদের ঘরবাড়িও ধ্বংস করে দিচ্ছি।

ইসরায়েল কতদিন ধরে এই বাফার জোন ও গাজার অন্যান্য এলাকা নিজেদের দখলে রাখবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস ধ্বংস না হওয়া এবং তাদের নেতারা গাজা ছাড়া না করা পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হবে না। এরপর গাজায় নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নেবে ইসরায়েল। তিনি আরও বলেছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বান বাস্তবায়ন করা হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা, মরদেহ নিয়ে মানববন্ধন

কথিত বাফার জোনকে ‘কিল জোন’-এ পরিণত করছে ইসরায়েলি সেনারা

আপডেট সময় : ০৪:২২:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫

গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার পর ইসরায়েলি বাহিনী অঞ্চলটির প্রায় অর্ধেকেরও বেশি অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ক্রমেই সংকুচিত ভূ-খণ্ডের দিকে। গাজা সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও অবকাঠামো ধ্বংস করে এমন অবস্থায় ফেলেছে, যেখানে বসবাস অসম্ভব। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সামরিক বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ হয়েছে। তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড এ খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েল বলছে, হামাসকে চাপে রাখতে এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় জিম্মি করা বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে এই ব্যবস্থা অস্থায়ীভাবে নেওয়া হয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠন ও গাজা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের দখলকৃত এলাকা—যার মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে বিভক্তকারী একটি করিডরও রয়েছে—দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস পরাজিত হলেও গাজায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে এবং ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

ইসরায়েলি সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ ও বাফার জোনের পরিকল্পিত সম্প্রসারণ গত ১৮ মাস ধরে চলছে বলে পাঁচ ইসরায়েলি সেনা মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন। এক ট্যাংক স্কোয়াডের সদস্য বলেন, তারা যা কিছু ধ্বংস করা সম্ভব, সব ধ্বংস করেছে। ফিলিস্তিনিদের ফিরে আসার মতো কিছুই থাকবে না। তারা কখনোই ফিরে আসবে না।

ইসরায়েলি বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের সংগঠন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স সোমবার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে সেনারা বাফার জোনকে একটি বিরান ভূমিতে পরিণত করার কথা স্বীকার করেছেন। সংগঠনটির দাবি, ব্যাপক ও ইচ্ছাকৃত ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ভবিষ্যতে এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার পথ তৈরি করছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা শুধু দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ৭ অক্টোবরের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণাঞ্চলের সম্প্রদায়গুলোর সুরক্ষা বাড়াতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের দাবি, গাজায় বেসামরিক লোকজনকে ক্ষতি করার কোনও ইচ্ছা নেই এবং তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলছে।

যুদ্ধ শুরুর দিনগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজাকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে ফেলে। সীমান্তসংলগ্ন এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের বের করে দিয়ে এক কিলোমিটারেরও বেশি গভীরে একটি বাফার জোন তৈরি করা হয়। এ ছাড়া নেতজারিম করিডর নামে একটি ভূখণ্ড দখল করে উত্তরের গাজা সিটি ও দক্ষিণের বাকি অংশকে বিচ্ছিন্ন করা হয়, যা গাজার ৫০ শতাংশেরও বেশি এলাকা দখল করে আছে বলে জানিয়েছেন বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াকভ গার্ব।

গত সপ্তাহে নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, দক্ষিণ গাজায় আরেকটি করিডর তৈরি করা হবে, যা রাফাহ শহরকে বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ আরও বিস্তৃত হচ্ছে, যেসব এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

‘কিল জোন’-এ পরিণত হওয়া বাফার জোন

ইসরায়েলি সেনারা বলছেন, বাফার জোনের কোনও স্পষ্ট সীমানা নেই। তবে যে কোনও ফিলিস্তিনিকে সেখানে প্রবেশ করলেই গুলি করা হচ্ছে। এক ট্যাংক স্কোয়াডের সদস্য বলেন, আর্মার্ড বুলডোজার দিয়ে জমি সমতল করে একটি ‘কিল জোন’ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ট্যাংক থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে প্রবেশকারী যে কাউকেই গুলি করা হবে—নারী ও শিশুরাও এর বাইরে নয়।

তিনি আরও বলেন, অনেক সেনা ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন কাজ করছে। আমি সেখানে গিয়েছিলাম তাদের হত্যা করার জন্য কারণ তারা আমাদের হত্যা করেছে। কিন্তু দেখলাম আমরা শুধু তাদেরই হত্যা করছি না, তাদের স্ত্রী, শিশু, এমনকি তাদের বিড়াল-কুকুরও মেরে ফেলছি। তাদের ঘরবাড়িও ধ্বংস করে দিচ্ছি।

ইসরায়েল কতদিন ধরে এই বাফার জোন ও গাজার অন্যান্য এলাকা নিজেদের দখলে রাখবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস ধ্বংস না হওয়া এবং তাদের নেতারা গাজা ছাড়া না করা পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হবে না। এরপর গাজায় নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নেবে ইসরায়েল। তিনি আরও বলেছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বান বাস্তবায়ন করা হবে।