ঢাকা ১১:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
শিরোনাম ::
Logo মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা, মরদেহ নিয়ে মানববন্ধন Logo সাংবাদিক কন্যা জামিমা আলীর বিবাহ সম্পন্ন,শুভেচ্ছায় ভাসছেন নব দম্পতি। Logo দেশের রাজনৈতিক আকাশে নতুন করে মেঘের আবির্ভাব হয়েছে: মান্না Logo জনগণই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে: যুক্তরাষ্ট্র Logo ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে বিএনপি: আসিফ নজরুল Logo বরিশালে ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ Logo ছয় দাবিতে সিলেট পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ Logo বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা Logo ট্রাম্পের চাপ উপেক্ষা করলো হার্ভার্ড, টিকতে পারবে কতদিন? Logo মৌলভীবাজারে জেল সুপার হিসেবে যোগদানের পর অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যায়-(দুদক) অনুসন্ধানে

মৌলভীবাজারে জেল সুপার হিসেবে যোগদানের পর অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যায়-(দুদক) অনুসন্ধানে

মৌলভীবাজার কারাগারের জেল সুপার মুজিবুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে বন্দিদের অত্যাচার এবং অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুদক থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মৌলভীবাজার কারাগারের জেল সুপার মুজিবুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য এবং অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বন্দিদের অত্যাচার করার লিখিত অভিযোগ জমা হয়েছে দুদকে।

জানা গেছে, সারা দেশে ৬৪টি কারাগার রয়েছে। প্রতিটি কারাগারের প্রধান হচ্ছেন সুপার, আর দ্বিতীয় হচ্ছেন জেলার। তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কারাগারগুলো পরিচালিত হয়ে থাকে। অথচ কারাবিধি যথাযথভাবে পালন করাই হচ্ছে কারা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। কারা কর্তৃপক্ষ টাকা কামানোর কাজে ব্যস্ত থাকায় কারাবন্দিরা তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।

কারাগারগুলোতে ক্যান্টিনবাণিজ্য, বন্দি বেচাকেনা, সাক্ষাৎবাণিজ্য, সিটবাণিজ্য, খাবারবাণিজ্য, চিকিৎসা, পদায়ন, জামিনবাণিজ্য প্রভৃতি অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় করে থাকেন কারা কর্মকর্তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুদকে এমন অভিযোগ হরহামেশাই জমা হয়।

কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংস্থাটির উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে অভিযোগসংশ্লিষ্ট জেল সুপার মুজিবুর রহমান, তার স্ত্রী রীনা সুলতানা ও তাদের দুই সন্তানের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের রেকর্ডপত্র চেয়ে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বীমা অফিস, সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগসংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র দুদকে পাঠানো শুরু হয়েছে।
দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘জেল সুপার মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি এবং বন্দি ও কারা কর্মচারীদের ওপর অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে। অত্যাচার চালানোর অভিযোগ যদিও দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। এর বাইরে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের যেমন অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান চলছে। জেল সুপার মুজিবুর রহমানের কাছে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে সেগুলো তিনি রোজার ঈদের আগে দুদকে জমা দিয়েছেন। অভিযোগসংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেও রেকর্ডপত্র পাঠানো হচ্ছে। রেকর্ডপত্র পাওয়ার পর সেসবের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করবেন কমিশনে। সে প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দুদকের কাছে থাকা অভিযোগে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বন্দিদের অভিযোগের শেষ নেই। কারাগারে সিটবাণিজ্য, ওয়ার্ডবাণিজ্য, মোবাইল কলের বাণিজ্য, সাক্ষাৎবাণিজ্য ও বন্দিদের খাবার চড়া দামে ক্যান্টিনে বিক্রি করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন কারা কর্মকর্তা-কারারক্ষীরা। মুজিবুর রহমান ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর জেল সুপার হিসেবে মৌলভীবাজার কারাগারে যোগদানের পর অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যায়।

একজন কারারক্ষীর বয়ানে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, কারাগারের ক্যান্টিনে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি দামে বন্দিদের কাছে খাবার বিক্রি করে দিনে কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় কারা র্কর্তৃপক্ষ। বন্দিদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার পরিমাণে কম দেখিয়ে এবং গুদামে পণ্য বোঝাই দেখিয়ে পণ্যক্রয়ের বিল-ভাউচার করে অর্থ আত্মসাত করা হয়। বন্দিদের তেল-সাবানও ক্যান্টিনে বিক্রি করা হয়। পরে বাইরে থেকে ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে এনে সেগুলো বন্দিদের কাছেই বিক্রি করা হয়। এ কাজ করেন অসীম পাল ও কিবরিয়া নামের দুই কারারক্ষী। প্রতিটি পণ্য বন্দিদের কিনতে হয় বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দামে। এছাড়া কারা ক্যান্টিনের বিক্রি বাড়ানোর জন্য সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী খাবার না দিয়ে বন্দিদের নিম্নমানের ও কম খাবার দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে অনেক বন্দি বিকাশে প্রিজনার্স ক্যাশ এনে ক্যান্টিন থেকে সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার হিসেবে মাছ, মাংস ও ডিম কিনে খান; আবার টাকা থাকলে মেলে ভিআইপি খানাদানা।

কারারক্ষীর সহযোগিতায় বাইরে থেকে মাছ, মাংস, ডিম, ফল ও সবজি কিনে এনে দুই বেলা বিক্রি হয় ডায়েট নামের খাবার। ১ পিস ডিম ৭০ টাকায়, ১ পিস পোনা মাছ ১০০-১২০ টাকায়, সবজি ৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এসব বাণিজ্যের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন জেল সুপার মুজিবুর রহমান মজুমদার। যারা কিনে খান তাদের সরকারি বরাদ্দের খাবার কোথায় যায় সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না।
দুদকের ঢাকা অফিসের এক বড়কর্তা নাকি তার নিকটাত্মীয় এ পরিচয় দিয়ে থাকেন জেল সুপার। এর আগে একটি কারাগারে তিনি জেল সুপার থাকা অবস্থায় দুদক কর্মকর্তাকে তদন্তের জন্য জেলে প্রবেশ করতে দেননি বলে দম্ভ করে বেড়ান। আওয়ামী লীগের আমলে সব জায়গায় বলে বেড়াতেন তিনি আওয়ামী লীগ করেন। ৫ আগস্টের পরে বলে বেড়াচ্ছেন তিনি বিএনপি করেন। আবার অনেক জায়গায় বলেন তিনি জামায়াত করেন। এভাবেই তিনি নিজের ক্ষমতা জাহির করেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন্দির পিতা জানিয়েছেন তার ছেলে কারাগারে; প্রয়োজন হলে ছেলের প্রতি মাসের নগদ টাকা কারা র্কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিকাশে পাঠান তিনি। বিকাশে প্রতি হাজারে কারা র্কর্তৃপক্ষকে কমিশন দিতে হয় ২০০ টাকা। অর্থাৎ ছেলের জন্য ১ হাজার টাকা পাঠালে সে পায় ৮০০ টাকা। সপ্তাহে একদিন সাক্ষাতের নিয়ম থাকলেও প্রতিদিন ৫০০ টাকার বিনিময়ে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক তারেক মাহমুদ রাজনৈতিক মামলায় প্রায় ৩ মাস কারাগারে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কারাগারের খাবারের মান খুব খারাপ। বন্দির স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে গেলে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। জেল সুপার কারাগারে বন্দিদের অনেক নির্যাতন করেন। তিনি নিজেও এর শিকার হয়েছেন।’

অভিযোগে বলা হয়েছে, কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে শিক্ষক শয়ন তাঁতী ও জনপ্রতিনিধি রিপন রায় জানান, কারাগারে হাসপাতালের বেড পেতে হলে অসুস্থ হওয়া জরুরি নয়। মাসে ৬ হাজার টাকা দিলেই সুস্থ বন্দি কারা হাসপাতালের বেডে থাকতে পারেন। আর অসুস্থ বন্দিরা কম্বল বিছিয়ে থাকেন মেঝেতে। কারা র্কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যদি কোনো রোগী মুখ খোলে তাহলে তাদের ওপর চালানো হয় অত্যাচার। ১০-১২ জন প্রভাবশালীকে মাসের পর মাস মেডিকেলে রেখে কারা র্কর্তৃপক্ষ মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

কারাবন্দিদের অভিযোগ, কারাগার থেকে ৭ দিন পরপর ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার নিয়ম থাকলেও টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন কথা বলার সুযোগ দেয় কারা র্কর্তৃপক্ষ। কারাগারের টেলিফোন অবৈধভাবে লিজ দেওয়া হয়েছে ইয়াবা কারবারিদের কাছে। এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাদকের অভিযোগে চাকুরিচ্যুত হয়ে চাকরি ফিরে পাওয়া কারারক্ষী ইকবাল ও আইদ্দুসের হাতে। এছাড়া জেল গেইটে দাঁড়িয়ে কারারক্ষী আইদ্দুস স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আসা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে নিয়ম ভেঙে টাকা হাতিয়ে নেন।

অভিযোগের বিষয়ে গত রবিবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় জেল সুপার মুজিবুর রহমান মজুমদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি ফোনকল কেটে দেন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা, মরদেহ নিয়ে মানববন্ধন

মৌলভীবাজারে জেল সুপার হিসেবে যোগদানের পর অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যায়-(দুদক) অনুসন্ধানে

আপডেট সময় : ০৭:২৭:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

মৌলভীবাজার কারাগারের জেল সুপার মুজিবুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে বন্দিদের অত্যাচার এবং অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুদক থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মৌলভীবাজার কারাগারের জেল সুপার মুজিবুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য এবং অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বন্দিদের অত্যাচার করার লিখিত অভিযোগ জমা হয়েছে দুদকে।

জানা গেছে, সারা দেশে ৬৪টি কারাগার রয়েছে। প্রতিটি কারাগারের প্রধান হচ্ছেন সুপার, আর দ্বিতীয় হচ্ছেন জেলার। তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কারাগারগুলো পরিচালিত হয়ে থাকে। অথচ কারাবিধি যথাযথভাবে পালন করাই হচ্ছে কারা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। কারা কর্তৃপক্ষ টাকা কামানোর কাজে ব্যস্ত থাকায় কারাবন্দিরা তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।

কারাগারগুলোতে ক্যান্টিনবাণিজ্য, বন্দি বেচাকেনা, সাক্ষাৎবাণিজ্য, সিটবাণিজ্য, খাবারবাণিজ্য, চিকিৎসা, পদায়ন, জামিনবাণিজ্য প্রভৃতি অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় করে থাকেন কারা কর্মকর্তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুদকে এমন অভিযোগ হরহামেশাই জমা হয়।

কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংস্থাটির উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে অভিযোগসংশ্লিষ্ট জেল সুপার মুজিবুর রহমান, তার স্ত্রী রীনা সুলতানা ও তাদের দুই সন্তানের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের রেকর্ডপত্র চেয়ে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বীমা অফিস, সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগসংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র দুদকে পাঠানো শুরু হয়েছে।
দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘জেল সুপার মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি এবং বন্দি ও কারা কর্মচারীদের ওপর অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে। অত্যাচার চালানোর অভিযোগ যদিও দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। এর বাইরে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের যেমন অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান চলছে। জেল সুপার মুজিবুর রহমানের কাছে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে সেগুলো তিনি রোজার ঈদের আগে দুদকে জমা দিয়েছেন। অভিযোগসংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেও রেকর্ডপত্র পাঠানো হচ্ছে। রেকর্ডপত্র পাওয়ার পর সেসবের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করবেন কমিশনে। সে প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দুদকের কাছে থাকা অভিযোগে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বন্দিদের অভিযোগের শেষ নেই। কারাগারে সিটবাণিজ্য, ওয়ার্ডবাণিজ্য, মোবাইল কলের বাণিজ্য, সাক্ষাৎবাণিজ্য ও বন্দিদের খাবার চড়া দামে ক্যান্টিনে বিক্রি করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন কারা কর্মকর্তা-কারারক্ষীরা। মুজিবুর রহমান ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর জেল সুপার হিসেবে মৌলভীবাজার কারাগারে যোগদানের পর অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যায়।

একজন কারারক্ষীর বয়ানে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, কারাগারের ক্যান্টিনে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি দামে বন্দিদের কাছে খাবার বিক্রি করে দিনে কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় কারা র্কর্তৃপক্ষ। বন্দিদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার পরিমাণে কম দেখিয়ে এবং গুদামে পণ্য বোঝাই দেখিয়ে পণ্যক্রয়ের বিল-ভাউচার করে অর্থ আত্মসাত করা হয়। বন্দিদের তেল-সাবানও ক্যান্টিনে বিক্রি করা হয়। পরে বাইরে থেকে ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে এনে সেগুলো বন্দিদের কাছেই বিক্রি করা হয়। এ কাজ করেন অসীম পাল ও কিবরিয়া নামের দুই কারারক্ষী। প্রতিটি পণ্য বন্দিদের কিনতে হয় বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দামে। এছাড়া কারা ক্যান্টিনের বিক্রি বাড়ানোর জন্য সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী খাবার না দিয়ে বন্দিদের নিম্নমানের ও কম খাবার দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে অনেক বন্দি বিকাশে প্রিজনার্স ক্যাশ এনে ক্যান্টিন থেকে সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার হিসেবে মাছ, মাংস ও ডিম কিনে খান; আবার টাকা থাকলে মেলে ভিআইপি খানাদানা।

কারারক্ষীর সহযোগিতায় বাইরে থেকে মাছ, মাংস, ডিম, ফল ও সবজি কিনে এনে দুই বেলা বিক্রি হয় ডায়েট নামের খাবার। ১ পিস ডিম ৭০ টাকায়, ১ পিস পোনা মাছ ১০০-১২০ টাকায়, সবজি ৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এসব বাণিজ্যের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন জেল সুপার মুজিবুর রহমান মজুমদার। যারা কিনে খান তাদের সরকারি বরাদ্দের খাবার কোথায় যায় সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না।
দুদকের ঢাকা অফিসের এক বড়কর্তা নাকি তার নিকটাত্মীয় এ পরিচয় দিয়ে থাকেন জেল সুপার। এর আগে একটি কারাগারে তিনি জেল সুপার থাকা অবস্থায় দুদক কর্মকর্তাকে তদন্তের জন্য জেলে প্রবেশ করতে দেননি বলে দম্ভ করে বেড়ান। আওয়ামী লীগের আমলে সব জায়গায় বলে বেড়াতেন তিনি আওয়ামী লীগ করেন। ৫ আগস্টের পরে বলে বেড়াচ্ছেন তিনি বিএনপি করেন। আবার অনেক জায়গায় বলেন তিনি জামায়াত করেন। এভাবেই তিনি নিজের ক্ষমতা জাহির করেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন্দির পিতা জানিয়েছেন তার ছেলে কারাগারে; প্রয়োজন হলে ছেলের প্রতি মাসের নগদ টাকা কারা র্কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিকাশে পাঠান তিনি। বিকাশে প্রতি হাজারে কারা র্কর্তৃপক্ষকে কমিশন দিতে হয় ২০০ টাকা। অর্থাৎ ছেলের জন্য ১ হাজার টাকা পাঠালে সে পায় ৮০০ টাকা। সপ্তাহে একদিন সাক্ষাতের নিয়ম থাকলেও প্রতিদিন ৫০০ টাকার বিনিময়ে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক তারেক মাহমুদ রাজনৈতিক মামলায় প্রায় ৩ মাস কারাগারে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কারাগারের খাবারের মান খুব খারাপ। বন্দির স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে গেলে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। জেল সুপার কারাগারে বন্দিদের অনেক নির্যাতন করেন। তিনি নিজেও এর শিকার হয়েছেন।’

অভিযোগে বলা হয়েছে, কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে শিক্ষক শয়ন তাঁতী ও জনপ্রতিনিধি রিপন রায় জানান, কারাগারে হাসপাতালের বেড পেতে হলে অসুস্থ হওয়া জরুরি নয়। মাসে ৬ হাজার টাকা দিলেই সুস্থ বন্দি কারা হাসপাতালের বেডে থাকতে পারেন। আর অসুস্থ বন্দিরা কম্বল বিছিয়ে থাকেন মেঝেতে। কারা র্কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যদি কোনো রোগী মুখ খোলে তাহলে তাদের ওপর চালানো হয় অত্যাচার। ১০-১২ জন প্রভাবশালীকে মাসের পর মাস মেডিকেলে রেখে কারা র্কর্তৃপক্ষ মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

কারাবন্দিদের অভিযোগ, কারাগার থেকে ৭ দিন পরপর ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার নিয়ম থাকলেও টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন কথা বলার সুযোগ দেয় কারা র্কর্তৃপক্ষ। কারাগারের টেলিফোন অবৈধভাবে লিজ দেওয়া হয়েছে ইয়াবা কারবারিদের কাছে। এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাদকের অভিযোগে চাকুরিচ্যুত হয়ে চাকরি ফিরে পাওয়া কারারক্ষী ইকবাল ও আইদ্দুসের হাতে। এছাড়া জেল গেইটে দাঁড়িয়ে কারারক্ষী আইদ্দুস স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আসা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে নিয়ম ভেঙে টাকা হাতিয়ে নেন।

অভিযোগের বিষয়ে গত রবিবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় জেল সুপার মুজিবুর রহমান মজুমদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি ফোনকল কেটে দেন।