
ছয় দফা দাবিতে নগরীর চন্ডিপুল পয়েন্টে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছে সিলেট পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে ১ ঘণ্টারও বেশী সময় ধরে মহাসড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ করে রাখে তারা। অবরোধের ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।পরে সেনাবাহিনী-পুলিশ ও বিএনপির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এর আগে, সকাল থেকে সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল সহকারে চন্ডিপুল এলাকায় আসেন তারা। সেখানে এসে বিপুল সংখক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর ফলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। ছুটে আসেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাজী তাজরুল ইসলাম তাজুল, দক্ষিণ সুরমা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কুহিনুর ইসলাম সহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ। তারা এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এরপর শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার নেন এবং বৃহস্পতিবার সকালে মহানগরীর চৌহাট্টায় অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন।
জানা যায়, বেশ কিছুদিন যাবত সিলেট পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। দাবীগুলো হলো- জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা–ইন–ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস এবং ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।