ঢাকা ০২:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২
অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারে জরুরী উদ্যোগ দরকার

দেখতে দেখতে চোখের আড়ালই হয়ে গেল রাণী মাছ!

  • নাজমুন নাহারঃ
  • আপডেট সময় : ০১:০৭:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
  • ৫৩৪ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর হাকালুকি হাওর আজ এক সংকটময় বাস্তবতার মুখোমুখি। এক সময় এই হাওরের জলাভূমি, নদী-নালা ও খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়তো দেশীয় প্রজাতির জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ। হেমন্ত-শীত মৌসুমের সকালগুলোতে মৎসজীবীরা আমাদের পাড়ায় মাছ বিক্রি করতে আসতেন। তাদের কাছ থেকে প্রচুর তরতাজা সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত। পাড়াবাসী বিলের সেই মাছগুলো জন্য অধীর প্রতিক্ষায় থাকতেন। সেই মাছগুলোর ভীড়ে রাণীমাছগুলোও থাকতো।

এখনো অবশ্য মৎসজীবীরা মাছ বিক্রি করতে আসেন, তবে রাণী মাছগুলোকে আর দেখা যায় না। রাণীমাছগুলো দেখতে দেখতে প্রায় চোখের আড়ালই হয়ে গেল!  আমাদের অতীত স্মৃতির সঙ্গে বাংলার এ চিরন্তন রাণীমাছটি ভালোলাগার উজ্জ্বল উদাহারণ হয়ে মিশে রয়েছে হৃদয়ে।

যেভাবে হাওর-বিলগুলো মেশিন দিয়ে শুকিয়ে মাছ আহরণ করা হচ্ছে তাতে অচিরেই হয়তো প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এ সুস্বাদু মিঠাপানির মাছগুলো।

ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এ মাছটিকে ‘বিপন্ন’ তালিকাভূক্ত করেছে। অনেক স্থানে এ মাছটিকে বউ মাছ, বেটি মাছ, পুতুল মাছ, বেতাঙ্গী মাছ প্রভৃতি আঞ্চলিক নামে ডাকা হয়।

সরেজমিনে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাণী মাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাদের মতে, আগামীতে এই মাছ একেবারে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা আক্ষেপ করে জানান, রাণী মাছের বংশ রক্ষায় মৎস্য বিভাগ বা কোনো সরকারি সংস্থার তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। ফলে এক সময় হাওর অঞ্চলের পরিচিত ও পছন্দের মাছটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওরগুলোর একটি, যা ২৪৩টি বিল নিয়ে গঠিত। সারা বছর এখানে নানা জাতের মাছ পাওয়া যায়। হাওরের পরিবেশে দেশীয় মাছের প্রাকৃতিকভাবে বংশ বিস্তার ঘটে থাকে। তবে বিগত বছরগুলোতে তেলাপিয়া, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ চাষযোগ্য মাছের উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও দেশীয় প্রজাতির মাছ, বিশেষ করে রাণী মাছের সংরক্ষণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মৎস্য গবেষক এবং জুনিয়র ল্যাবেরেটরি স্কুল, ধানমন্ডি, ঢাকা এর জীববিজ্ঞানের শিক্ষক একে জহুরুল ইসলাম বলেন, রাণীমাছের ইংরেজি নাম Bengal loach বা Queen loach। চলনবিলসহ আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলায় এক সময় এ মাছটিকে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে রাণী মাছের দু’ ধরনের প্রজাতি রয়েছে। একটির বৈজ্ঞানিক নাম Botia dario এবং অপরটির বৈজ্ঞানিক নাম Botia lohachata। Botia dario প্রজাতির রাণমাছের দেহের রং হলুদ এবং দেহে কালচে রঙের লম্বা দাগ থাকে। আর Botia lohachata  প্রজাতির রাণীমাছের দেহও হলুদ বা হলদেটে। তবে এর দেহে ইংরেজি ‘ওয়াই’ বর্ণমালার মতো কালো দাগ থাকে এবং দু’টি দাগের মধ্যবর্তী অংশে একটি কালো দাগ অবস্থিত।
তবে Botia lohachata প্রজাতির চেয়ে Botia dario প্রজাতির রাণীমাছ আমাদের দেশে অনেক বেশি পাওয়া যেত। উভয় প্রজাতির মাছের আইশ অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির-যা প্রায় সাধারণ দৃষ্টিতে বোঝাই যায় না বলে জানান এ গবেষক।

 

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরসহ আশপাশের জলাশয়গুলো থেকে ইতোমধ্যে ২৩টি দেশীয় মাছের প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এসব মাছের অনেকগুলোর নামও নতুন প্রজন্ম জানে না। এই তালিকায় অন্যতম হচ্ছে রাণী মাছ, যা এক সময় সিলেট অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি অত্যন্ত পরিচিত ও রসনাসম্মত মাছ ছিল।

স্থানীয় মৎস্যজীবী ও হাওরবাসীদের মতে, সরকার যদি চাষযোগ্য অন্যান্য মাছের মতো রাণী মাছের সংরক্ষণ ও চাষে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে আবারও হাকালুকি হাওর ও এর আশপাশের জলাশয়গুলোতে এই মাছের পুনরাবির্ভাব সম্ভব। তারা বলেন, এর জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা, অভয়াশ্রম সম্প্রসারণ এবং স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধি।

 

তবে আশার কথা শুনা যায় প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) রানি মাছকে বিপন্ন প্রজাতির মাছ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেলেও তার কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে ।

তবে সুখবর হলো, সম্প্রতি বিপন্ন প্রজাতির এই মাছটির কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উত্পাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। ময়মনসিংহে ইনস্টিটিউটের স্বাদু পানিকেন্দ্রে এ সফলতা অর্জিত হয়েছে।

গবেষকদলে ছিলেন: ড. সেলিনা ইয়াছমিন, মো. রবিউল আওয়াল, ড. এ এইচ এম কোহিনুর ও ড. মো. শাহা আলী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রজননকৌশল উদ্ভাবনের ফলে রানি মাছকে চাষের আওতায় আনা যাবে।

বিএফআরআই সূত্র জানিয়েছে, একসময় বাংলাদেশের খালবিল, নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়ে এই মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয় সংকোচন, পানিদূষণ এবং অতি আহরণের ফলে মাছটির বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ায় এর প্রাপ্যতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত বছর রানি মাছের সংরক্ষণ, প্রজনন ও পোনা উৎপাদন বিষয়ে গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ করে বিএফআরআই।

প্রজননের জন্য যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও কংশ নদ এবং নেত্রকোনার হাওর থেকে মাছটি সংগ্রহ করা হয়। পরে তা গবেষণা কেন্দ্রের পুকুরে প্রতিপালন করা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ডিম নিষিক্ত ও ফোটার হার যথাক্রমে ৭৫ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, রানি মাছ মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রজনন করে থাকে। জুন-জুলাই এদের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। একটি পরিপক্ব স্ত্রী মাছে প্রতি গ্রামে ৮০০ থেকে ৯০০ ডিম পাওয়া যায়।

একটি পূর্ণবয়স্ক ও প্রজননক্ষম রানি মাছ সাধারণত ৮ থেকে ১০ গ্রাম ওজনের হয়। পুরুষ মাছের তুলনায় স্ত্রী রানি মাছ অপেক্ষাকৃত আকারে বড় হয়। এ মাছ প্রধানত প্লাংকটন ও পোকামাকড় খায়।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বলেন, বিপন্ন মাছগুলোকে ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি।

দেশীয় মাছের বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হাকালুকির রাণী মাছের মতো প্রজাতিগুলোর সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় খুব শিগগিরই এ প্রাকৃতিক ঐতিহ্য শুধুই স্মৃতিতে রয়ে যাবে।

 

 

 

ট্যাগস :

অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারে জরুরী উদ্যোগ দরকার

দেখতে দেখতে চোখের আড়ালই হয়ে গেল রাণী মাছ!

আপডেট সময় : ০১:০৭:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর হাকালুকি হাওর আজ এক সংকটময় বাস্তবতার মুখোমুখি। এক সময় এই হাওরের জলাভূমি, নদী-নালা ও খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়তো দেশীয় প্রজাতির জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ। হেমন্ত-শীত মৌসুমের সকালগুলোতে মৎসজীবীরা আমাদের পাড়ায় মাছ বিক্রি করতে আসতেন। তাদের কাছ থেকে প্রচুর তরতাজা সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত। পাড়াবাসী বিলের সেই মাছগুলো জন্য অধীর প্রতিক্ষায় থাকতেন। সেই মাছগুলোর ভীড়ে রাণীমাছগুলোও থাকতো।

এখনো অবশ্য মৎসজীবীরা মাছ বিক্রি করতে আসেন, তবে রাণী মাছগুলোকে আর দেখা যায় না। রাণীমাছগুলো দেখতে দেখতে প্রায় চোখের আড়ালই হয়ে গেল!  আমাদের অতীত স্মৃতির সঙ্গে বাংলার এ চিরন্তন রাণীমাছটি ভালোলাগার উজ্জ্বল উদাহারণ হয়ে মিশে রয়েছে হৃদয়ে।

যেভাবে হাওর-বিলগুলো মেশিন দিয়ে শুকিয়ে মাছ আহরণ করা হচ্ছে তাতে অচিরেই হয়তো প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এ সুস্বাদু মিঠাপানির মাছগুলো।

ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এ মাছটিকে ‘বিপন্ন’ তালিকাভূক্ত করেছে। অনেক স্থানে এ মাছটিকে বউ মাছ, বেটি মাছ, পুতুল মাছ, বেতাঙ্গী মাছ প্রভৃতি আঞ্চলিক নামে ডাকা হয়।

সরেজমিনে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাণী মাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাদের মতে, আগামীতে এই মাছ একেবারে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা আক্ষেপ করে জানান, রাণী মাছের বংশ রক্ষায় মৎস্য বিভাগ বা কোনো সরকারি সংস্থার তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। ফলে এক সময় হাওর অঞ্চলের পরিচিত ও পছন্দের মাছটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওরগুলোর একটি, যা ২৪৩টি বিল নিয়ে গঠিত। সারা বছর এখানে নানা জাতের মাছ পাওয়া যায়। হাওরের পরিবেশে দেশীয় মাছের প্রাকৃতিকভাবে বংশ বিস্তার ঘটে থাকে। তবে বিগত বছরগুলোতে তেলাপিয়া, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ চাষযোগ্য মাছের উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও দেশীয় প্রজাতির মাছ, বিশেষ করে রাণী মাছের সংরক্ষণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মৎস্য গবেষক এবং জুনিয়র ল্যাবেরেটরি স্কুল, ধানমন্ডি, ঢাকা এর জীববিজ্ঞানের শিক্ষক একে জহুরুল ইসলাম বলেন, রাণীমাছের ইংরেজি নাম Bengal loach বা Queen loach। চলনবিলসহ আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলায় এক সময় এ মাছটিকে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে রাণী মাছের দু’ ধরনের প্রজাতি রয়েছে। একটির বৈজ্ঞানিক নাম Botia dario এবং অপরটির বৈজ্ঞানিক নাম Botia lohachata। Botia dario প্রজাতির রাণমাছের দেহের রং হলুদ এবং দেহে কালচে রঙের লম্বা দাগ থাকে। আর Botia lohachata  প্রজাতির রাণীমাছের দেহও হলুদ বা হলদেটে। তবে এর দেহে ইংরেজি ‘ওয়াই’ বর্ণমালার মতো কালো দাগ থাকে এবং দু’টি দাগের মধ্যবর্তী অংশে একটি কালো দাগ অবস্থিত।
তবে Botia lohachata প্রজাতির চেয়ে Botia dario প্রজাতির রাণীমাছ আমাদের দেশে অনেক বেশি পাওয়া যেত। উভয় প্রজাতির মাছের আইশ অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির-যা প্রায় সাধারণ দৃষ্টিতে বোঝাই যায় না বলে জানান এ গবেষক।

 

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরসহ আশপাশের জলাশয়গুলো থেকে ইতোমধ্যে ২৩টি দেশীয় মাছের প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এসব মাছের অনেকগুলোর নামও নতুন প্রজন্ম জানে না। এই তালিকায় অন্যতম হচ্ছে রাণী মাছ, যা এক সময় সিলেট অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি অত্যন্ত পরিচিত ও রসনাসম্মত মাছ ছিল।

স্থানীয় মৎস্যজীবী ও হাওরবাসীদের মতে, সরকার যদি চাষযোগ্য অন্যান্য মাছের মতো রাণী মাছের সংরক্ষণ ও চাষে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে আবারও হাকালুকি হাওর ও এর আশপাশের জলাশয়গুলোতে এই মাছের পুনরাবির্ভাব সম্ভব। তারা বলেন, এর জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা, অভয়াশ্রম সম্প্রসারণ এবং স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধি।

 

তবে আশার কথা শুনা যায় প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) রানি মাছকে বিপন্ন প্রজাতির মাছ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেলেও তার কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে ।

তবে সুখবর হলো, সম্প্রতি বিপন্ন প্রজাতির এই মাছটির কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উত্পাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। ময়মনসিংহে ইনস্টিটিউটের স্বাদু পানিকেন্দ্রে এ সফলতা অর্জিত হয়েছে।

গবেষকদলে ছিলেন: ড. সেলিনা ইয়াছমিন, মো. রবিউল আওয়াল, ড. এ এইচ এম কোহিনুর ও ড. মো. শাহা আলী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রজননকৌশল উদ্ভাবনের ফলে রানি মাছকে চাষের আওতায় আনা যাবে।

বিএফআরআই সূত্র জানিয়েছে, একসময় বাংলাদেশের খালবিল, নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়ে এই মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয় সংকোচন, পানিদূষণ এবং অতি আহরণের ফলে মাছটির বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ায় এর প্রাপ্যতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত বছর রানি মাছের সংরক্ষণ, প্রজনন ও পোনা উৎপাদন বিষয়ে গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ করে বিএফআরআই।

প্রজননের জন্য যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও কংশ নদ এবং নেত্রকোনার হাওর থেকে মাছটি সংগ্রহ করা হয়। পরে তা গবেষণা কেন্দ্রের পুকুরে প্রতিপালন করা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ডিম নিষিক্ত ও ফোটার হার যথাক্রমে ৭৫ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, রানি মাছ মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রজনন করে থাকে। জুন-জুলাই এদের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। একটি পরিপক্ব স্ত্রী মাছে প্রতি গ্রামে ৮০০ থেকে ৯০০ ডিম পাওয়া যায়।

একটি পূর্ণবয়স্ক ও প্রজননক্ষম রানি মাছ সাধারণত ৮ থেকে ১০ গ্রাম ওজনের হয়। পুরুষ মাছের তুলনায় স্ত্রী রানি মাছ অপেক্ষাকৃত আকারে বড় হয়। এ মাছ প্রধানত প্লাংকটন ও পোকামাকড় খায়।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বলেন, বিপন্ন মাছগুলোকে ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি।

দেশীয় মাছের বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হাকালুকির রাণী মাছের মতো প্রজাতিগুলোর সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় খুব শিগগিরই এ প্রাকৃতিক ঐতিহ্য শুধুই স্মৃতিতে রয়ে যাবে।